বর্তমান সময়ে অনেক মানুষেরই একটি সাধারণ অভিযোগ— “আয় ঠিকই আছে, কিন্তু মাসের শেষে টাকা থাকে না।” ২০২৫ সালের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এই সমস্যা আরও স্পষ্ট হয়েছে। মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং অনিয়ন্ত্রিত খরচের কারণে সঞ্চয় করা কঠিন হয়ে উঠছে। তবে সঠিক বাজেট পরিকল্পনা থাকলে আয় কম হলেও নিয়মিত সঞ্চয় করা সম্ভব।
বাজেট পরিকল্পনা কেন এত জরুরি
বাজেট মূলত আপনার টাকার একটি মানচিত্র। কোথা থেকে টাকা আসছে এবং কোথায় যাচ্ছে—এই দুই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তরই বাজেট। বাজেট না থাকলে অপ্রয়োজনীয় খরচ ধরা পড়ে না এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্যও ঝাপসা হয়ে যায়।
ধাপ ১: মাসিক আয়ের পরিষ্কার হিসাব করুন
প্রথমেই আপনার সব আয়ের উৎস লিখে ফেলুন। বেতন, ফ্রিল্যান্স কাজ, টিউশন, ব্যবসা—যেখান থেকেই আয় আসুক না কেন, সবকিছু যোগ করে মোট মাসিক আয় নির্ধারণ করুন। অনুমান নয়, বাস্তব সংখ্যা ব্যবহার করুন।
ধাপ ২: খরচ তিন ভাগে ভাগ করুন
খরচকে তিনটি ভাগে ভাগ করলে নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়:
- প্রয়োজনীয় খরচ: ভাড়া, খাবার, যাতায়াত, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট
- আংশিক প্রয়োজনীয় খরচ: মোবাইল ডাটা, বাইরে খাওয়া, সাবস্ক্রিপশন
- অপ্রয়োজনীয় খরচ: অযথা শপিং, ইমপালস কেনাকাটা
ধাপ ৩: আগে সঞ্চয়, পরে খরচ
বেশিরভাগ মানুষ খরচের পর যা থাকে তা সঞ্চয় করে। এই অভ্যাস বদলাতে হবে। আয় পাওয়ার সাথে সাথে কমপক্ষে ১০–২০% আলাদা করে সঞ্চয়ের জন্য রাখুন। এটিকে খরচ হিসেবে ধরুন, অপশন হিসেবে নয়।
ধাপ ৪: ৫০-৩০-২০ নিয়ম ব্যবহার করুন
সহজ বাজেট কাঠামোর জন্য ৫০-৩০-২০ নিয়ম কার্যকর:
- ৫০% প্রয়োজনীয় খরচ
- ৩০% ব্যক্তিগত ও জীবনযাপন খরচ
- ২০% সঞ্চয় ও বিনিয়োগ
আয় কম হলে অনুপাত সামান্য পরিবর্তন করা যেতে পারে, তবে সঞ্চয় অংশ বাদ দেওয়া উচিত নয়।
ধাপ ৫: মাস শেষে নিজেকে মূল্যায়ন করুন
প্রতি মাস শেষে দেখুন—কোথায় বাজেট ভেঙেছে এবং কেন ভেঙেছে। নিজেকে দোষারোপ না করে শেখার মানসিকতা রাখুন। বাজেট একটি চলমান প্রক্রিয়া, একবারে পারফেক্ট হয় না।
সাধারণ ভুল যেগুলো এড়িয়ে চলবেন
- ছোট খরচ হিসাব না করা
- জরুরি তহবিল না রাখা
- ক্রেডিট বা ধারকে আয় হিসেবে ধরা
উপসংহার
২০২৫ সালে ব্যক্তিগত আর্থিক স্থিতিশীলতা ভাগ্যের উপর নয়, বরং অভ্যাসের উপর নির্ভর করে। সঠিক বাজেট পরিকল্পনা আপনাকে শুধু সঞ্চয় করতে নয়, মানসিক শান্তিও দেবে। আজ থেকেই ছোট পরিসরে শুরু করুন—কারণ আর্থিক শৃঙ্খলাই ভবিষ্যতের নিরাপত্তা।
Post a Comment